ম্যাগাজিনের স্বাদ প্রথম দিয়েছিল বোধ হয় স্কুলই। মনে পড়ে কোনও একটা দিন হঠাৎ টিফিনের পর সারি সারি বই নিয়ে ক্লাসে এল বেণুমাসি। আর তারপর এক এক করে সবার ডেস্কে রেখে গেল একটা করে বই। একরঙা মলাট। ওপরে স্কুলের নাম। দধীচির বজ্রের প্রতীক। দেখলাম ছোটবাড়ি, বড়বাড়ি মিলিয়ে সব মেয়েদের লেখা। পাশে পাশে ক্লাসের উল্লেখ। দিদিদেরও লেখা। কী আনন্দে হাত বুলাই পাতাগুলোয়, নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকি নতুন কালির আর তারপর বাড়ি নিয়ে আসি লাফাতে লাফাতে। গর্ব করে দেখাই বাবা মা, ভাই বোন, পাড়া পড়শি, বন্ধুদের। সেই শুরু। তারপর বছর বছর নতুন নতুন রঙে ম্যাগাজিন আসতে থাকল। খুলেই দেখি আছে কিনা! ওম্মা এই দেখো আমারও লেখা আছে। খুশিতে বুক ভরে ওঠে। ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা চোখে দেখার সেই তো প্রথম সোয়াদ! সে কি ভোলা যায়? সব্বার লেখা পড়ে ফেলি আর লেখার মধ্যে দিয়ে নতুন করে আলাপ হয় মানুষগুলোর সঙ্গে। চিরকালের মুখচোরা বর্ণালি কেমন মন খারাপিয়া একটা কবিতা লিখে ফেলেছে! বিষণ্ণতার মধ্যে দিয়ে এই প্রথম দেখি ওর সংবেদনশীল মন। উঁচু ক্লাসের মধুরাদি সাত সাগর আর তেরো নদী পেরিয়ে দেখে এসেছে মাদাম ত্যুসোর মোমের পুতুলের জাদুঘর! পড়ি, ভাবি আর অবাক হই। অনসূয়াদির ছবি, অমৃতার প্রবন্ধ সঅঅব পড়া হয়ে যায়! রক্তের মধ্যে একটু একটু করে ঢুকতে থাকে ম্যাগাজিনের নেশা। যে নেশায় ভর করে হাতে লেখা পত্রিকা বের করে দেখিয়ে আসি বড়দিকে। বড় মিনুদির উৎসাহে চলতে থাকে আরও আরও নতুন নতুন পরিকল্পনা। তারপর এক এক করে বছর পেরিয়ে যায়। একদিন দেখি ইশকুল এর চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরের কেঠো কেজো দুনিয়াটায় দাঁড়িয়ে আছি। গান, নাচ, ছবি আঁকা, লেখালেখি, সব কিছু থেকে দূরে বাইরে কোথায় একটা! যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে ওঠে মন। ছুটে যেতে ইচ্ছে করে উঠোনটার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে... ইচ্ছে করে স্বরূপাদির সঙ্গে বসে সেই আগের মতো দেশ বিদেশের সাহিত্য নিয়ে, হালফিলের বাংলা লেখা নিয়ে... সুমন নচিকেতা নিয়ে গল্প করি।


অনেক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আমরা কেউ কেউ হয়তো আবার ফিরে পেয়েছি আমাদের ভালোবাসার জগৎটাকে। কিন্তু "আমাদের ইশকুল" হওয়ার পর দেখলাম এখনও অনেকেই দূরে থেকে গিয়েছে! সংসারের চাপে, কেরিয়ারের চাপে, কাজের ভিড়ে নিজেদের ভালো লাগা , ভালোবাসাগুলো যেন চাপা পড়ে গিয়েছে কোন কোণে! তাদেরই উৎসাহে প্রথম উঠে এল একটা ম্যাগাজিন করার প্রস্তাব। দীর্ঘ জল্পনা চলতে থাকল চার-পাঁচ মাস ধরে। কেমন হবে ম্যাগাজিন। কী হবে তার নাম। বছরে কতবার বের হবে। সাহিত্য পত্রিকা হবে নাকি অন্য কিছু! কারা নেবে দায়িত্ব! কেউ কেউ বলল, অ্যালামনি্দের নিজস্ব পত্রিকা প্রৈতি তো আছেই! সেখানেই জমা দিই না কেন! বাকিরা বলল, না, সে তো ছাপা হয়। এমন অনলাইন ই-ম্যাগ তো হবে না, যে চাইলেই বাড়ি বসে পড়ে ফেলা যাবে! 
এমনি নানান কথাকথির পর সিদ্ধান্তে আসা গেল। ব্লগ হিসেবেই বেরোবে আমাদের ইশকুলের ম্যাগাজিন।


কোরাস, খোলা জানলা, কিচির মিচির, তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম, টুকরো কথা, আমরা, রোদ্দুর, বৈঠক, জমায়েত... এমন হাজারো নামকে পেছনে ফেলে শেষমেশ সকলের পছন্দ হয়ে গেল অপাঠ্য। নাম ও কাজ দুই অর্থেই হয়তো! কে জানে!


আত্মপ্রকাশ সংখ্যায় ইচ্ছে থাকলেও আরও নানান বিভাগ রাখা গেল না। বেশি লেখা পাওয়া গেল না বলেই। পরবর্তী সংখ্যাগুলোয় সে অভাব পূরণ হবে আশা রাখি। দিন রাত এক করে যারা ম্যাগাজিনটার লেখা যোগাড় করা, প্রুফ দেখা, ডিজাইন তৈরী করা, আপলোড করা এইসব কাজ করে গিয়েছে নিচে তাদের নাম রইল। আর এদের সকলের পেছনে রইল আমাদের ইশকুল এর ৭০০ সদস্যের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ, সমর্থন। তাদের সব্বাইকে নিয়েই আমাদের "অপাঠ্য"।


ইশকুল এক ছাদের তলায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমাদের। সেই কবে থেকেই। এতো বছর কেটে যাওয়ার পরও তার শেকড় মরেনি। মরবে না। নিত্য নতুন কিশলয়..নিত্য নতুন কুঁড়ি... নস্টালজিয়াকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়ার মতো সুখ কি আর কিছুতে আছে? আমাদের গ্যালাক্সি ঘুরে চলেছে ৫ নং নিবেদিতা লেন কে ঘিরে... "গর ফিরদউস্ত... রুহে জমিন আস্ত... হামিন আস্তো... হামিন আস্তো... হামিন আস্ত"






সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে
দোয়েলপাখি দাশগুপ্ত(১৯৯৬)


যারা না থাকলে "অপাঠ্য" অপাঠ্যই থেকে যেত :
দ্যুতি মুস্তাফি (১৯৯১)
মন্দাক্রান্তা দাশগুপ্ত (২০০৪)
প্রমিতা মৈত্র (২০০৮)


আরও দু'জনের কথা বলতে চাই :
ডালিয়া ঘোষ দস্তিদার (১৯৯৬)... অপাঠ্য নামটা ওরই দেওয়া
শর্মিলা রায় (২০০০)... লেখা যোগাড় ও নানান উদ্যোগে যে সবসময় পাশে থেকেছে

9 comments:

  1. khub bhalo proyash...anek shubhechha roilo...addin bade school magazine er swad i alada...lekha dite chaile kibhabe o kake pathabo ektu janabe?

    ReplyDelete
  2. :) vishon valo lagche.noboborshe emon 1ta upohar.

    ReplyDelete
  3. @ Swagata di, nischoi, porerbar theke pathiyo.. emag.amaderishkul@gmail.com- ei holo lekha pathanor thikana.. tumi kon year?

    ReplyDelete
  4. Darun hoyeche. Lekhagulo to botei ar pechoner cover tao. :)

    ReplyDelete
  5. Jak... porisrom sarthok holo tobe..
    sobaike janai shubho nabobarsho :)

    ReplyDelete
  6. o, amader ishkul er page tay to comment kora jabe na, tai ekhanei boli, ota durdanto! Etao oboshyo

    ReplyDelete
  7. Ei jayega taa ayddin dekhi i ni X-/ ! Tai aabaar kore bolte hochhe - khoob bhalo kaaj ,sobai . Ekhane aamaar naamta pore baroi apluto bodh korchhi ^_^

    ReplyDelete