সাবেকি বাঙালি পেটপুজো

বাঙালি আজ দেশে বিদেশে সর্বত্র, পৃথিবীর কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানেই বাঙালি সেখানেই তাদের নিজস্বতা। নিজেদের বন্ধু-বান্ধব, গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা... এক কথায় নিজের মত করে গড়ে তোলা আরেকটা জগৎ। আর এই গল্প, হাসি, নাটক, গান সব কিছুর সাথে মিলেমিশে গেছে বাঙালি খাওয়া-দাওয়া। গান আর খাবার ছাড়া কি আড্ডা জমে? সেরকমই আমাদের অতি প্রিয় কটা বাঙালি খাবারের কথা আজ বলি...

মুড়ি -ঘন্ট


উপকরণ -
রুই বা কাতলা মাছের মাথা (১টি)
গোবিন্দভোগ চাল (১ মুঠো)
আলু (ছোট একটা ডুমো করে কাটা)
তেজপাতা (২ টি)
পেয়াঁজ কুচি (ছোট পেয়াঁজ এর অর্ধেক)
জিরে বাটা (২ -৩ টেবল চামচ)
আদা বাটা (দেড় টেবল চামচ)
শুকনো লঙ্কা বাটা (১/২ টেবল চামচ)

হলুদ গুঁড়ো(১ টেবল চামচ)
লবন (স্বাদ মতো)
টমাটো কুচি (ছোট টমাটো ১ /২)
সর্ষের তেল
চিনি (সামান্য)
ঘি
গরম মশলা গুঁড়ো

প্রণালী -
মাছের মাথা প্রথমে ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে। প্যানে সর্ষের তেল গরম করে মাথার টুকরোগুলোকে ভেজে আলাদা করে তুলে রাখ। এভাবেই একে একে আগে থেকে টুকরো করে রাখা আলু হালকা ভেজে তুলে রাখতে হবে । তারপর পরিষ্কার করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা গোবিন্দভোগ চালকে ৩ -৪ মিনিট ভেজে তুলে রাখতে হবে। এরপর সেই তেলেই তেজপাতা ফোড়ন দিতে হবে । ফোড়ন হয়ে গেলে ওতে পেয়াঁজকুচি যোগ কর। পেঁয়াজ হালকা করে ভাজা হলে তাতে একে একে জিরে বাটা, আদা বাটা,হলুদ ,লঙ্কা বাটা, নুন আর টমাটো কুচি দিতে হবে.এবার মশলা ভালো করে কষানোর পালা। দরকার হলে সামান্য জল দেওয়া যেতে পারে। মশলা থেকে তেল ছাড়লে তার মধ্যে ভেজে রাখা মাছের মাথা ,আলু আর চাল যোগ করতে হবে। সব একসাথে খুব ভালো করে মিশিয়ে সামান্য জল দিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখ। সব জিনিস যখন সেদ্ধ হয়ে জল শুকিয়ে যাবে তখন ঢাকা সরিয়ে তাতে সামান্য চিনি মেশাতে হবে। এরপর ওপর থেকে ঘি আর গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নাও আর গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন কর ।
 

শুক্তো


উপকরণ
বেগুন (১/২ কাপ লম্বা করে কাটা)
কাঁচকলা (১/২ কাপ খোসা ছাড়িয়ে লম্বা করে কাটা)
সজনে ডাঁটা(৩ -৪টে কেটে নেওয়া)
পটল (৩ - ৪টে অর্ধেক লম্বা করে কাটা)
বরবটি (৩ -৪টে লম্বা করে কাটা)
সিম (৫- ৬টা)
উচ্ছে (১ টা করে কাটা)
ঝিঙে ( ১ টা খোসা ছাড়িয়ে লম্বা করে কাটা)
মিষ্টি আলু (টুকরো করে কাটা ১ টা)
বড়ি(৮-১০ টা)
সর্ষের তেল (দু' পলা)
শুকনো লঙ্কা (২ টি)
রাধুনি /পাঁচ ফোড়ন (১ছোট চামচ)
আদা বাটা (১ ছোট চামচ)
সর্ষে বাটা (দেড় চামচ)
পোস্ত বাটা (দেড় চামচ)
দুধ (১/২ কাপ)
নারকোল কোরা(১/২ কাপ)
ঘি (দু' চামচ)
লবণ
চিনি

প্রণালী

কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে সব সবজি আলাদা আলাদা করে ভেজে তুলে রাখ। উচ্ছেটা লাল করে ভেজে আলাদা রাখতে হবে। বড়িগুলোকেও আলাদা করে ভেজে রাখতে হবে। বড়ি প্রথমে বিনা তেলে ভেজে তারপর অল্প তেলে ভাজতে পার। বাকি তেলে শুকনো লঙ্কা আর রাধুনি ফোড়ন হিসেবে দিতে হবে, রাধুনি না পেলে পাঁচ ফোড়ন দেওয়া যেতে পারে। ফোড়নের গন্ধ বেরোলে তাতে সর্ষে আর পোস্ত বাটা দিয়ে একটু ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে। একই সাথে নুন আর চিনি যোগ করতে হবে এরপর একে একে সব সবজি উচ্ছে ভাজা ছাড়া তাতে যোগ করতে হবে। সব মশলা আর সবজি একসাথে ভালো করে মেশাতে হবে। তারপর তাতে ভাজা বড়িগুলো আর আদা বাটা দিয়ে কম আঁচে ঢাকা দিয়ে দাও ৫-১০ মিনিট,এভাবে রেখে সবজি সেদ্ধ হয়ে গেলে ঢাকা সরিয়ে তাতে দুধ দিতে হবে, সবজিগুলো যেহেতু আগে থেকেই ভাজা ছিল তাই সেদ্ধ হতে খুব কম সময় লাগবে। নারকেল কোরা দিতে চাইলে এসময় সেটাও দিয়ে দাও। আর সাথে উচ্ছে ভাজাও দিয়ে দাও। এবারে গ্যাস বাড়িয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। ঘন হয়ে এলে ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নাও। দুপুর বেলা গরম ভাতের সাথে এই শুক্তো সত্যি অনবদ্য।



 


মশলা চা - এর সাথে ভেজিটেবল চপ


মশলা চা

উপকরণ
দুধ (হোল মিল্ক) (১ কাপ)
জল (১ কাপ)
চিনি (২ ছোট চামচ)
চাপাতা (২ ছোট চামচ)
লবঙ্গ (২ টি)
দারচিনি (ছোট ১  টুকরো)
ছোট এলাচ (২ টি)
আদা (থেতো করে নেওয়া)



প্রণালী -
সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে বসিয়ে দাও গ্যাস কম করে। একটু সময় নিয়ে ৭ -৮  মিনিট  বসিয়ে রাখো। নিজে থেকে ফুটে উঠলে নামিয়ে ছেঁকে নাও ২ কাপ চা।
ভেজিটেবল চপ

উপকরণ
আলু ( ছোট ১ টা)
ফুলকপি (মাঝারি ৪ টুকরো)
বিট (ছোট ১ টা)
গাজর (ছোট গাজরের অর্ধেকটা)
কড়াইশুঁটি (অল্প কটি)

গোটা জিরে (১/২ ছোট চামচ)
গোটা ধনে (১/২ ছোট চামচ)
গোটা মৌরি (১/২ ছোট চামচ)
গোটা গোলমরিচ (৪ -৫ টা)
তেজপাতা (ছোট ১ টা)
শুকনো লঙ্কা (ছোট ১ টা)
লবঙ্গ (২ টি)
ছোট এলাচ (২ টি)
দারচিনি (ছোট এক টুকরো)

ময়দা (সামান্য )
বেসন (২ -৩ ছোট চামচ)
বিস্কুটের গুঁড়ো(১ কাপ)
জল (২ -৩  ছোট চামচ)

নুন
চিনি
সাদা তেল
চিনে বাদাম (৮ -১০ টা)
কিশমিশ (৮ -১০ টা )
আদা বাটা (১ টা )

প্রণালী

সব সবজিগুলোকে প্রথমে সেদ্ধ করে চটকে নিতে হবে । সমস্ত মশলাগুলো প্যানে শুকনো ভেজে নিতে হবে কম আঁচে। সুন্দর গন্ধ বেরোলে নামিয়ে ঠান্ডা করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। কড়াইতে অল্প তেল গরম করে তাতে চিনেবাদামগুলো ভেজে তুলে রাখ। এরপর সেদ্ধ সবজিগুলোতে দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে জল শুকিয়ে নিতে হবে। জল শুকিয়ে কড়াইয়ের গা থেকে ছেড়ে আসলে তখন তাতে আগে থেকে গুঁড়ো করা ভাজা মশলা দিতে হবে। আদা বাটা, বাদাম ভাজা, নুন, মিষ্টিটাও এ সময় দিতে হবে। ইচ্ছে হলে একটু কাঁচালংকা কুচি ও ধনেপাতা কুচিও এই সময় দেওয়া যেতে পারে। ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে ১ চামচ ময়দা দিয়ে আবার নাড়াচাড়া করে নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ওই মন্ডটা থেকে চপের আকারে গড়ে নিতে হবে। প্রতিটা চপে একটা করে কিশমিশ যোগ করে দাও। এই পরিমাপে ৪-৫ টা চপ তৈরী হবে। একটা বাটিতে বেসন গুলে নিতে হবে জল দিয়ে। একটু পাতলা মিশ্রণ তৈরী হবে। সেই গোলায় চপ গুলো ডুবিয়ে তারপর সেগুলোকে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে সব কটা চপ গড়তে হবে। এই চপগুলো এক ঘন্টা মতো ফ্রিজে রেখে তারপর কড়াইতে তেল গরম করে মাঝারি আঁচে চপগুলো ভেজে তুলতে হবে। এইভাবে বানিয়ে রাখা চপ বেশ কিছুদিন এয়ার টাইট কৌটোতে রেখে সময় মত গরম করে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে।



সহেলী চক্রবর্তী
২০০১

2 comments:

  1. shuktor chhobi ta just darun ...kheteo fasto kelas hoyechhilo mone hochchhe...

    ReplyDelete
  2. মুড়িঘণ্ট আমার অলটাইম ফেভারিট... এবার আর মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে হবে না বানিয়ে দাও বানিয়ে দাও করে

    ReplyDelete