৫ নং নিবেদিতা লেন... স্বপ্নে ঘুরে ফিরে আসে বারবার। তার দালান, উঠোন, ক্লাসঘর... ব্ল্যাকবোর্ড, চক, বেঞ্চ, কড়িকাঠ... লাল বারান্দা... বন্ধুরা, দিদিরা... ছোটবেলার নির্মল দিনগুলো... শৈশব আর কৈশোরের রোদঢালা দিন সব... কুড়িয়ে নিয়ে এলাম নিভৃত অন্তঃপুর থেকে এইখানে, আমরা সবাই। এই আমাদের ইশকুল।
২০১১র অগাস্ট মাসে ফেসবুকে শুরু হয়েছিল আমাদের বৈঠকী গ্রুপ, যার নাম 'আমাদের ইশকুল' । স্কুল ছাড়ার পর যে শূন্যতা ছিল এতোদিন -বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, ইশকুল বাড়িটার থেকে দূরে থেকে- যে নস্টালজিয়া একা একা বয়ে নিয়ে গিয়েছি আমরা... ক্রমশ তা ভাগ করে নেওয়ার একটা জায়গা হয়ে উঠল এই ফোরাম। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সমস্ত প্রাক্তনীরা... সেই ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ২০১১ অবধি ব্যাচের সব মেয়ে এসে জড়ো হল একে একে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নিবেদিতা স্কুলের শিক্ষিকাও। 'আমাদের ইশকুল' আবার ভরতি করে নিল তার ফেলে আসা সব পড়ুয়াদের। যারা মাঝপথে ছেড়ে চলে গিয়েছিল অন্যত্র... তারাও প্রাণের টানে ঠিক খুঁজে নিল নিজ নিকেতন। স্কুলের সেই সব দুষ্টুমি, পাগলামি, বন্ধুত্ব, হৈ চৈ, আড্ডা, গল্প - সব কিছুই যেন নতুন করে ফিরিয়ে দিয়েছে এই 'ইশকুল'। খুলে দিয়েছে নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা, আলোচনার জানলা... হারিয়ে যাওয়া কত শত স্মৃতি, মজা, আদর, আবদার, শাস্তি, অভিমান, শাসন, সোহাগ সব। যেখানে কারওর বয়েস বাড়েনি। যেখানে এখনও প্রতি সকালে স্কুলবাস এসে থামে বোরোলিন হাউসের সামনের রাস্তায়। ব্যাগ কাঁধে ছুটে ছুটে গেট পেরিয়ে ঠাকুরদালানে লাইন করে প্রার্থনা হয়... নাইনের দিদিরা স্তবগুচ্ছ, ব্যাজ আছে কিনা দেখে নেয়... ঘন্টা পড়ে... ক্লাস চলে... রোলকল হয়... টিফিন জুড়ে খেলা চলে উঠোনে, ক্রিশ্চিন ভবনের মাঠে... ফোর সি বিল্ডিঙ এর এক চিলতে লাইব্রেরী, সায়েন্স বিল্ডিং এর পেছনের গলি, গ্যারেজের পাশের আলুকাবলির ঠেক, শিল্প বিভাগের ঘোরানো সিঁড়ি, মেন বিল্ডিং এর শ্বেত পাথরের সিঁড়ি, ম্যাপঘর, সিকরুম, বড়দির ঘরে স্বামীজির অয়েল পেন্টিং, গেট দিয়ে ঢুকেই সিস্টারের ছবি, ভারতের রিলিফ ম্যাপ... এখনও যেখানে ঠিক তেমনি দাঁড়িয়ে আছে... যেখানে সবার বয়েস থমকে আছে ষোলয়!