ছোটবেলা এমন একটা সময় যাকে মানুষ জীবনে একবার অন্তত ফিরে পেতে চায়। আর
সেটা যদি তার স্কুলজীবন হয়, তাহলে তো
আর কথাই নেই। জীবনের এই
সময়টাতে কতকিছুর বদল হয়। শরীরে, মনে। তবে স্কুলজীবন বলতে বেশিরভাগই বোঝে বন্ধুদের সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে কাটানো প্রাণবন্ত দিনগুলো। কিন্তু নিবেদিতা স্কুলে যারা পড়েছে, তাদের ছাত্রজীবন যে
শুধু বন্ধুদের নিয়ে কেটেছে, তা কেউই বলতে পারবে না। আকর্ষণের কারণ আরও অনেক কিছুই ছিল। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমার চরিত্রের ও চিন্তাধারার মেটামরফোসিসের পেছনে এক্সট্রিনসিক এবং ইনট্রিনসিক দুটো ফ্যাক্টরই আমার স্কুল।
আমি নিবেদিতা স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম ফাইভ সি-র নবীন হয়ে। অ্যাডমিশন টেস্ট
দিয়ে যখন স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, স্কুল সম্বন্ধে আমার ধারণা ছিল খুবই সীমিত। সিস্টার নিবেদিতা নামের এক বিদেশিনী স্বামী বিবেকানন্দর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য ভারতবর্ষে এসেছিলেন। ইংরেজ শাসিত তৎকালীন ভারতে হিন্দু ঐতিহ্য অনুসারে একটি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুল। এই অল্পবিদ্যায ভর করে স্কুলে গেলাম। স্কুলবাড়িকে এক ঝলক দেখে মনে হল
যেন কোনও জমিদারবাড়ি। চারপাশে কীরকম পিনড্রপ সাইলেন্স! জমিদারবাড়ির সিংহদুয়ার দিয়ে ঢুকে চোখে পড়ে সিস্টারের বিশাল ছবি, অদ্ভুত শান্ত, স্নিগ্ধ। ঢুকে যে
আভিজাত্যের ছাপ পেয়েছিলাম, তার ষোলকলা পূর্ণ হল ঠাকুরদালান দেখে। সত্যি বলতে কি, প্রথম দর্শনে আমার মনে হয়েছিল, আমি এই স্কুলে একেবারেই বেমানান, বেশিদিন টিকে থাকতে পারব না বোধহয়। ইতিমধ্যে কানাঘুষোয় শুনেছি পরিচালনা এবং ডিসিপ্লিনে কলকাতার সেরা স্কুল এটি। এক্ষেত্রে কোনওভাবেই সমঝোতা চলবে না। তাই আমি যদি তাল মিলিয়ে উঠতে না পারি তাহলে এখানকার মায়া ত্যাগ করতে হবে।
স্কুলের প্রথম দিন প্রার্থনার সময় সবথেকে বেশি অবাক হয়েছিলাম। স্তবগুচ্ছ হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছি, হঠাৎই এক
গুরুগম্ভীর শব্দ হল, ওমমম... শব্দ অনেক আগেই শুনেছি, কিন্তু তার প্রাবল্য সেই প্রথম টের পেলাম। ঘোর কাটার আগেই সিনিয়র দিদিরা একের পর এক
সংস্কৃত মন্ত্র আওড়ে গেল। আমার হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে ওঠার আগেই প্রার্থনা শেষ হল, এবং লাইন ধরে ক্লাসে এসে বসলাম। ভারতীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী এই স্কুলের পঠনপাঠন রীতি, তাই মেঝের উপর চট পেতে বসে ক্লাস করতে হবে। বেশ পূর্ণমাত্রায় শুরু হল
আমার ব্রহ্মচর্য জীবন।
নিয়ম শৃঙ্খলায আমার স্কুলের দিনগুলো বাঁধা পড়তে লাগল। কিন্তু একঘেয়ে একদিনের জন্যও লাগেনি। সময় যত কাটতে থাকল,দিদিদের সঙ্গে সম্পর্কও আরও নিবিড় হতে লাগল। আমার অজান্তেই স্কুলটা আমার ফার্স্ট হোম হয়ে উঠল। দিদিদের সাহচর্যে শুধু আমার হাতের লেখা নয়, পেন ধরার ভঙ্গিও বদলে গেল।
স্কুলকে ঘিরে আমার একটা নিজস্ব জগত গড়ে উঠল। দিদিদের আন্তরিকতা আর
শাসনের মধ্যে দিয়ে আমি বড়
হয়ে উঠতে লাগলাম,একদিকে সঞ্জিতাদির পারফেক্ট উত্তর লিখতে শেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা; অন্যদিকে বীথিদির সেই উত্তরে সাবলীলতা আনানো। মানসীদির ক্লাসে ভূগোল পড়ার ফাঁকে দেশ বিদেশের গল্প শোনা,তো
নির্বাণপ্রাণাজীর কাছে ইংরাজি রাইটিং স্কিল তৈরি করা,এসব নিয়ে দিব্যি দিন কাটতে থাকল। ধীরে ধীরে স্কুলটাকে আরও বেশি করে আবিষ্কার করলাম। মেন বিল্ডিং ছেড়ে ক্রিস্টিন বিল্ডিং, ফোর-সি বিল্ডিং-এ জায়গা পেলাম। ঘটনাবহুল ছিল সেইসব দিনগুলো। এমনি এক মজার কান্ড ঘটল একদিন। তখন আমি সেভেনে পড়ি, ক্লাসটিচার নির্বাণপ্রাণাজী, আর ইতিহাস পড়াতেন সঞ্জিতাদি। আমি ক্লাস ফাইভের পর থেকেই ওঁর সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমতা আমতা করতাম, সেটা ভয় ছিল, না কী ছিল সেটা বুঝতে পারতাম না। হয়তো ওঁর ব্যক্তিত্বের কারণেই উনি সামনে এলে আমার মুখ থেকে কথা সরত না। যাই হোক, ক্লাসে এসেছেন, পড়া ধরছেন, আমাকে ধরলেন। পড়া পারলাম, কিন্তু ওই
দুই লাইনের উত্তরের জন্য দশলাইন খরচ করলাম। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,"এখনও আমাকে ভয় পাও লহনা? আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, না দিদি,ঠিক ভয়
হয় না"। “তাহলে কি হয়?” আমি মনে মনে বেশ খানিকটা সাহস সঞ্চয় করে বললাম, "দিদি লজ্জা লাগে"। সারা ক্লাস হো হো
করে হেসে উঠল। সেই প্রথম দেখেছিলাম ওঁকে এতটা ছড়িয়ে হাসতে।
সেভেনে আর একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা, শুভ্রাদির ক্লাস করা। ওঁর ক্লাস শুরুর আগেই সকলে তটস্থ হয়ে থাকত। কারণ একটাই, ওঁর পড়ানোর আর পড়া ধরবার ধরন বেশ স্বতন্ত্র ছিল। উনি ক্লাসেও ভাইভা-র মতো কাছে ডেকে পড়া ধরেন। আমাদের মধ্যে কাউন্টিং চলতে থাকল, কবে কার পালা। যার যেদিন ডাক পড়ছে সে গিয়ে পড়া দিচ্ছে। কিন্তু উত্তর কারওরই ঠিকঠাক হচ্ছে না। শেষে উনিই বলে দিতেন। তখন আমি বুঝতে পারিনি একটা সঠিক উত্তর লিখতে গেলে, ধারণা কতটা পরিষ্কার রাখতে হয়, কিন্তু এতদিনে বেশ বুঝতে পারছি। ভাগ্যিস তাঁর দৌলতে কনসেপ্ট পরিস্কার হয়েছিল।
স্কুল যে আমাদের বাড়ির থেকে কোনও অংশে কম না, তার পরিচয়, যত দিন যেতে লাগল, তত পেলাম। দিদিরা দিজাস্টার ম্যানজেমন্ট টিমের মতো প্রস্তুত থাকতেন। বৃষ্টি পড়লে ছাতা ধরে এক বিল্ডিং থেকে আর এক বিল্ডিং-এ পাঠানো, খাবার না আনলে জোর করে খাওয়ানো, জামাকাপড়ে দাগ লাগলে পরিষ্কার ইউনিফর্ম পরানো, একদিনের বেশি অনুপস্থিত হলে খবর নেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেভেনে আর একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা, শুভ্রাদির ক্লাস করা। ওঁর ক্লাস শুরুর আগেই সকলে তটস্থ হয়ে থাকত। কারণ একটাই, ওঁর পড়ানোর আর পড়া ধরবার ধরন বেশ স্বতন্ত্র ছিল। উনি ক্লাসেও ভাইভা-র মতো কাছে ডেকে পড়া ধরেন। আমাদের মধ্যে কাউন্টিং চলতে থাকল, কবে কার পালা। যার যেদিন ডাক পড়ছে সে গিয়ে পড়া দিচ্ছে। কিন্তু উত্তর কারওরই ঠিকঠাক হচ্ছে না। শেষে উনিই বলে দিতেন। তখন আমি বুঝতে পারিনি একটা সঠিক উত্তর লিখতে গেলে, ধারণা কতটা পরিষ্কার রাখতে হয়, কিন্তু এতদিনে বেশ বুঝতে পারছি। ভাগ্যিস তাঁর দৌলতে কনসেপ্ট পরিস্কার হয়েছিল।
স্কুল যে আমাদের বাড়ির থেকে কোনও অংশে কম না, তার পরিচয়, যত দিন যেতে লাগল, তত পেলাম। দিদিরা দিজাস্টার ম্যানজেমন্ট টিমের মতো প্রস্তুত থাকতেন। বৃষ্টি পড়লে ছাতা ধরে এক বিল্ডিং থেকে আর এক বিল্ডিং-এ পাঠানো, খাবার না আনলে জোর করে খাওয়ানো, জামাকাপড়ে দাগ লাগলে পরিষ্কার ইউনিফর্ম পরানো, একদিনের বেশি অনুপস্থিত হলে খবর নেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
যখন আমি এইটে পড়ি, তখন আমার একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা হয়েছিল। আকাশে বাতাসে তখন স্বাধীনতা স্বাধীনতা গন্ধ, পনেরই আগস্ট আসন্ন। অনুষ্ঠানের জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রার্থনা শেষ করে আমরা সকলেই যে যার ক্লাসে এসে বসেছি। আমাদের ক্লাসে দিদি তখনও আসেননি। আমার মনে হল
আমার ডেস্কটা কেমন যেন বেঁকে আছে। সেটাকে ঠিক করতে গিয়েই হল
যত বিপত্তি। কখন যে সেটা পায়ের উপর এসে পড়ল বুঝতে পারলাম না। বেঞ্চ সরাতেই বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলের নখটা ঘষে উঠে গেল। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি, মাংসের দলা থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। আমি বরাবরই রক্ত দেখে নার্ভাস। তার ওপর চিন্তা হল
যদি আঙুলের হাড়টা ভাঙে! ভয়ে এত কান্নাকাটি শুরু করলাম যে বন্ধুরা অফিসে খবর দিয়ে এল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঊমাদি এলেন। এসে আমাকে ধরে ধরে নিয়ে এলেন অফিসের সামনে। আমি বসে হাউমাউ করে কাঁদছি। কোনও খেয়াল নেই। কখন যে দিদিরা এসে আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, বুঝতে পারলাম না। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ঘটনার বর্ণনা করছি দিদিদের কাছে।
এর মধ্যে ঝাপসা চোখে দেখছি, শ্যামলীদি, মৌলিদি, শর্মিলাদি, বীথিদি, সোমাদি প্রায় সকলেই আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। সকলে নানাভাবে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। সবকিছু ছাপিয়ে আমার মনে তখন একটাই চিন্তা, মা বাবা জানতে পারলে খুব চিন্তা করবেন। দিদিরা আমাকে শান্ত করার জন্য বলতে লাগলেন, "লহনা, এত রক্ত নষ্ট করে লাভ নেই, বরং চার্টের কাজে লাগালে ভালো হয়”। আমাকে ভোলানোর ছলে স্বরূপাদি খুব মন দিয়ে, ধৈর্য ধরে আমার আঙুলে বিটাডাইন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধতে লাগলেন। তারপর আমাকে ধরে ধরে সিকরুমে নিয়ে গিয়ে বসালেন। তারপর বাড়িতে ফোন গেল! আমি জানতাম কিছুক্ষণ পর মা
বাবা আমাকে নিতে আসবে, তারপর ডাক্তার... আরও কত কী যে
হবে। কিন্তু যে
যত্ন আমি ওইসময় পেয়েছিলাম, তার তুলনা কোনও কিছুর সঙ্গেই হয়
না। যতদিন না আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়েছি, ততোদিন অবধি ক্রমাগত আমার খোঁজ নিয়ে গেছেন দিদিরা।
আমার কাছে স্বাধীনতা দিবসের চার্টের ব্যাপারটাও বেশ অন্যরকম লাগে।
সকলেরই তাতে কোনও না কোনও ভূমিকা থাকে। আঁকা লেখার কাজে পারদর্শীরা তো থাকে বটেই, যারা আমার মতো বেগুণ তারাও নানাবিধ কাজে সামিল হয়ে যায়। কেউ পেন পেন্সিল জোগান দিচ্ছে, তো কেউ লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যস্ত। আর কিছু না পেলে, কেউ একটা ইরেজার জোগাড় করে চার্টের থেকে পেন্সিলের দাগ মুছে দিতে ব্যস্ত। বাজনার তালে তালে প্যারেডের দুমদাম শব্দে পা
ফেলা, দেশাত্মবোধক গান, তার মাঝে কবিতা, আবৃত্তি...কী প্রাণোচ্ছলতা ছিল চারদিকে। উৎসবের মতো মনে হতো ওইসময় ।
একইভাবে, আমি স্কুল ছাড়া সরস্বতী পুজোর কথা ভাবতে পারি না। সেদিন সাজগোজে কোনও বাধা থাকত না। বৈদিক মতে পুজো, আয়োজনই ছিল অন্যরকম। সারা স্কুলবাড়িটা, যজ্ঞ কুণ্ডের ধোঁয়ায ভরে যেত। ঠাকুরদালান জুড়ে ঘি, ফুল বেলপাতার গন্ধ। লিখতে গিয়েও নাকে ভেসে আসছে। খাওয়ার সময় জোর করে দিদিরা লুচি, মিষ্টি বেশি খাওয়াতেন। আর মাধ্যমিকের বছরে ক্লাস টেনের পরীক্ষার্থীদের জন্য থাকত বিশেষ প্রসাদ, একসাথে বসে মন্ত্রোচ্চারণ করে তারপর খেতে হত সে প্রসাদ। বিসর্জনের দিন দেবীবরণ করতেও দিদিরা শিখিয়েছিলেন।
একইভাবে, আমি স্কুল ছাড়া সরস্বতী পুজোর কথা ভাবতে পারি না। সেদিন সাজগোজে কোনও বাধা থাকত না। বৈদিক মতে পুজো, আয়োজনই ছিল অন্যরকম। সারা স্কুলবাড়িটা, যজ্ঞ কুণ্ডের ধোঁয়ায ভরে যেত। ঠাকুরদালান জুড়ে ঘি, ফুল বেলপাতার গন্ধ। লিখতে গিয়েও নাকে ভেসে আসছে। খাওয়ার সময় জোর করে দিদিরা লুচি, মিষ্টি বেশি খাওয়াতেন। আর মাধ্যমিকের বছরে ক্লাস টেনের পরীক্ষার্থীদের জন্য থাকত বিশেষ প্রসাদ, একসাথে বসে মন্ত্রোচ্চারণ করে তারপর খেতে হত সে প্রসাদ। বিসর্জনের দিন দেবীবরণ করতেও দিদিরা শিখিয়েছিলেন।
স্কুলের পড়াশুনার মান নিয়ে কোনও প্রশ্ন হবে না। কিন্তু তার পাশাপাশি, উত্তরপত্রের নান্দনিকতার ওপর দিদিরা বরাবরই খুব জোর দিতেন। তার চরম প্রচেষ্টা দেখেছিলাম ক্লাস টেন-এ। খাতার চারদিকে কতটা লাইন টানতে হবে, দুটো শব্দের মাঝে কতটা স্পেস দিতে হবে, কীভাবে টাইম ধরে লেখা প্র্যাকটিস করতে হবে, সবকিছু একেবারে ধরে ধরে শিখিয়েছিলেন। ভুল করলে বারবার কারেকশন। এমনকি টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর পর স্বরূপাদি এটাও বলে দিয়েছিলেন, "মাধ্যমিকের খাতা বাঁধার সময় ফসকা গেরো দেবে না। পুরো গিঁট বাঁধবে। না হলে খাতা খুলে যেতে পারে, বুঝলে! এই
ব্যাপারগুলো এখন যেন কীরকম মজ্জাগত হয়ে গেছে। চাইলেও এই
নিয়মের বাইরে বেরোতে পারব না আমি। তাই এখন কোনও কাজ করতে গেলে ততটাই নিখুঁত করার চেষ্টা করি।
ভুল ত্রুটি তখন প্রতি পদক্ষেপেই হতো। কিন্তু মাথার উপর দিদিরা ছিলেন, তাই সংশোধন করে দিতেন। অ্যানুয়াল ফাংশনে বেদমন্ত্র শুনে দর্শকরা যতই বাহবা দিন না কেন, শিবলোকপ্রাণাজী ঠিক বুঝে যেতেন কে কোথায় ভুল করেছি। যিনি শেখান, তাঁর চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় না বোধহয়।
আমার আমূল পরিবর্তনের কারণ আমার স্কুল। ভীতি কাটিয়ে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনার কৃতিত্ব তার। একদিন কোথাও শুনেছিলাম, মেয়েদের জীবনে এক ঘরকন্না আছে, আর নয়তো ত্যাগ আছে। কিন্তু সংসার আর সন্ন্যাসের মেলবন্ধনে তৈরি এমন এক আশ্চর্য জায়গা আছে, তা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। সিস্টার ব্রহ্মচারিণী, মা গৃহিণী। উভয়ের নিষ্ঠায়, আশীর্বাদে, যত্নে গড়া এই স্কুল। তাদের লক্ষ্য ছিল আদর্শ মেয়ে তৈরি করা। আর সেই ঐতিহ্য আজও চলছে। ভবিষ্যতেও চলবে।
আমার গোটা ষোল আনা জীবনের চার আনা যদি স্কুলজীবন হয়, তাহলে এই চার আনাই আমার বাকি বারো আনা জীবন কাটানোর পুঁজি, এটাই সম্বল। পড়াশোনা, আদবকায়দা, স্টাইল, সবকিছু নিখুঁত ভাবে করা এই সবকিছু শিখেছি আমি নিবেদিতা স্কুল থেকে। প্রয়োগে কতটা সফল হয়েছি জানি না, কিন্তু থামব না, চেষ্টা চালিয়ে যাব। তাই বারবার ফিরে ফিরে যাই, শান্তির নীড়ে, প্রাণশক্তি আহরণ করতে। আমার মা বাবাও আমার প্রেরণাদাত্রী হিসেবে স্কুলকে ধরে রেখেছেন। তাঁরাও আমার মধ্যে দিয়ে স্কুলের সঙ্গে জুড়ে থাকতে চান। তাই কোনওভাবেই আমাদের বিচ্ছেদ হবে না।
আমার আমূল পরিবর্তনের কারণ আমার স্কুল। ভীতি কাটিয়ে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনার কৃতিত্ব তার। একদিন কোথাও শুনেছিলাম, মেয়েদের জীবনে এক ঘরকন্না আছে, আর নয়তো ত্যাগ আছে। কিন্তু সংসার আর সন্ন্যাসের মেলবন্ধনে তৈরি এমন এক আশ্চর্য জায়গা আছে, তা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। সিস্টার ব্রহ্মচারিণী, মা গৃহিণী। উভয়ের নিষ্ঠায়, আশীর্বাদে, যত্নে গড়া এই স্কুল। তাদের লক্ষ্য ছিল আদর্শ মেয়ে তৈরি করা। আর সেই ঐতিহ্য আজও চলছে। ভবিষ্যতেও চলবে।
আমার গোটা ষোল আনা জীবনের চার আনা যদি স্কুলজীবন হয়, তাহলে এই চার আনাই আমার বাকি বারো আনা জীবন কাটানোর পুঁজি, এটাই সম্বল। পড়াশোনা, আদবকায়দা, স্টাইল, সবকিছু নিখুঁত ভাবে করা এই সবকিছু শিখেছি আমি নিবেদিতা স্কুল থেকে। প্রয়োগে কতটা সফল হয়েছি জানি না, কিন্তু থামব না, চেষ্টা চালিয়ে যাব। তাই বারবার ফিরে ফিরে যাই, শান্তির নীড়ে, প্রাণশক্তি আহরণ করতে। আমার মা বাবাও আমার প্রেরণাদাত্রী হিসেবে স্কুলকে ধরে রেখেছেন। তাঁরাও আমার মধ্যে দিয়ে স্কুলের সঙ্গে জুড়ে থাকতে চান। তাই কোনওভাবেই আমাদের বিচ্ছেদ হবে না।
আমার স্কুল কোনও অচলায়তন নয়, সেই বাড়ির সব
দরজা জানালা খোলা। শাসন যেমন আছে, তেমনি আদর আপ্যায়নও আছে। তার ওপর অভিমানও করতে পারি, আবার মন
খুলে হাসতেও পারি। এমন মায়ায় বেধেছে আমাকে যে একে ছেড়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই ফেয়ারওয়েলের দিন আমি কাঁদিনি। বিচ্ছেদ হবে না যখন তখন বিচ্ছেদ বেদনা হওয়া অপ্রাসঙ্গিক। আমার স্কুল আমার কাছে মন্দির, আবার দুর্যোগে নিরাপদ আশ্রয়। এতো ইতিবাচক হাওয়া আছে জায়গাটা জুড়ে যে
সবকিছু ঠিক হয়ে যায়, মন নির্মল হয়ে যায়। মায়ের আশীর্বাদ আছে বলে কথা। স্কুল ইট-কাঠ-পাথরের কাঠামো, কিন্তু তাতে প্রাণ সঞ্চার করে শিক্ষিকা ও ছাত্রী দুজনেই। আমাদের স্কুলের এই দুজনের সম্পর্ক খুব মধুর, সবচেয়ে আলাদা। রোজ প্রার্থনার সময় "সহনাববতু"
গেয়ে এটাই তো
আমরা বলি, এই
সম্পর্ক যেন অটুট থাকে, "মা
বিদ্বিষাবহৈ”, দুজনের মধ্যে কোনও বিদ্বেষ না হয়। সম্পর্কটা যেন যান্ত্রিক না হয়ে যায়।
![]() |
সৌরজগতে গ্রহ আর উপগ্রহের পায়চারির গপ্পো কে না জানে ! ছবিঃ অমৃতা পাণ্ডা [২০১০] |
দিদিদের আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে যতটুকু সময় আমি ওখানে ছিলাম, আমি ওই
ছাঁচে ঢেলে গেছি। একজন আমাকে মজা করে বলেছেন, "ও তো রামকৃষ্ণ ‘মেশিন'-এ পড়ে।" সত্যিই তাই, নিবেদিতা স্কুল এমন একটা মেশিন, যার কোনও প্রোডাক্টেই ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট থাকে না। আমার কাছে আমার স্কুল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আবেগের কেন্দ্র। বিধির বাঁধন কাটিয়ে উঠতে পারি, এতটাই শক্তি ও
সাহস জোগায আমার স্কুল। তাই আমার ভাঙা গড়া তারই হাতে, সে
এতটাই শক্তিমান।
লহনা চৌধুরী [২০১৪]
Casino Games - MapYRO
ReplyDeleteBest Casino Slot 강원도 출장샵 Games in Las Vegas. 777 Casino Las Vegas Boulevard 안산 출장안마 South Las Vegas, 서산 출장마사지 NV 89109 - Use this 경기도 출장샵 simple form to find the 여주 출장안마 best casino games at Casino.