 |
Common Cobra(গোখরো) -one of my research species |
চারদিকে অফুরান সবুজে ঘেরা বাগানবাড়িটি এই মফস্বল অঞ্চলে অনেকেরই চেনা আর সবচেয়ে বেশি চেনা বোধহয় এ বাড়ির সর্বকনিষ্ঠা সদস্যা ওই ছোট্ট মেয়েটির। জ্ঞান হওয়া ইস্তক সে ভালবেসেছে এই বাড়ির বিশাল চৌহদ্দির মধ্যে গজিয়ে ওঠা গাছপালা, পাখি, প্রজাপতি। তার ডানপিটেমিতে সবাই অস্থির। এই গাছ থেকে ঘুঘু পাখির ডিমসমেত বাসা পেড়ে আনে তো এই বুলবুলি, টুনটুনির সদ্যোজাত ছানাগুলোকে ঘাঁটাঘাঁটি করে। কোনও কিছুতে যে ডরায় না, একটিমাত্র জায়গায় তার বীরত্ব কেমন ফিকে হয়ে যায়। সেটা হল বাথরুম এর শাওয়ার এর পাইপ আর তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটা গল্প।
বাড়ির বড়দের মুখে মুখে ফেরা এই গল্পটা শুনেছে সে বহুবার। তার দিদি একদিন রাতের বেলা বাথরুম এ ঢুকেছিল- তন্দ্রাচ্ছন্ন, খেয়াল করেনি মাথার ওপরে শাওয়ার এর পাইপ পেঁচিয়ে ঝুলছে একটি জলঢোঁড়া সাপ! এরপরটা সহজেই কল্পনীয়। দিদির ভীত আর্তনাদ আর ঘুমন্ত বাড়ির আতঙ্কিত জেগে ওঠা। এই ঘটনার পর কেটে গেছে দিন, মাস, বছর। ঘটনা হয়েছে অতিরঞ্জন আর সেই থেকে গল্প। গল্পের সাপ বেড়েছে আকারে, ভয়াবহতায়। বাড়ির বড়দের স্মৃতিতে সে গল্পটুকুও ক্রমশ ফিকে হয়ে গেছে। ছোট্ট মেয়েটি কিন্তু ভোলেনি। সে গাছগাছালির ফাঁকে, ঘাসের আড়ালে, বাড়ির আনাচকানাচে খুঁজে বেড়ায় সেই অদেখা বিস্ময়কে। বিশেষ করে বাথরুম এ ঢুকলেই তার চোখ আটকে যায় ওই শাওয়ার পাইপে- কৌতূহল মিশ্রিত ভয় নাকি বেপরোয়া খোঁজ !
 |
data collection in paddy field at Tamil Nadu for thesis work on ecology of common venomous snakes in India |
দিন যায়। ছোট্ট মেয়েটির বয়স এখন বছর দশেক। মফস্বলে ভাল ইশকুল নেই বিশেষ। তাই কলকাতার এক ভাল স্কুলে ভর্তি হল সে। একদিন চোখের জলে বিদায় জানাতে হল তার স্বপ্ন-ভালবাসার বাড়িটিকে। তার শহুরে যন্ত্রণার শুরু হল সেই। শহর আর ভাল স্কুলের পড়াশুনোর চাপে চারপাশের সবুজের সাথে সেই একান্ত কথোপকথনটুকু বিশেষ হয় না আর আজকাল। পাখপাখালি আর ঘাসফড়িংরাও যেন কেমন অচেনা ঠেকে এখন। কিন্তু নতুন বাড়ির নতুন বাথরুমে শাওয়ার এর পাইপ এখনও ভীষণ চেনা তার আর সেই অদ্ভুত খোঁজটাও বহাল তবিয়তে বর্তমান।
সাপের প্রতি তার কেমন একটা তীব্র আকর্ষণ, যা বেড়ে চলে ক্রমশ। স্কুল থেকে এখন কলেজ। টিভিতে সাপ নিয়ে কিছু দেখালে সে অনড়। সাপুড়ের বাঁশির আওয়াজ যত দূর থেকেই আসুক না কেন, তার কান খাড়া। সাপের ছবিওয়ালা বই তার খুব প্রিয়। মোট কথা, আশেপাশে সাপ-সম্পর্কিত তথ্যাদি তার চোখ কান এড়ায় না। কিন্তু শাওয়ারের পাইপের সাথে জড়ানো অভ্যাস কেমন ক্লান্ত করে তাকে আজকাল। ক্লান্তি থেকে আসে বিরক্তি আর সেই থেকে জেদ। জানতেই হবে কিসের অমোঘ টানে তার অস্তিত্ব ওই পাইপটার সঙ্গে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে!
খোঁজ তাকে ঘরছাড়া করল শেষমেশ। শহরকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে। বিষাক্ত সাপ নিয়ে শুরু হল তার গবেষণা। দক্ষিণ ভারতের এক আদিবাসী গোষ্ঠীর পৃথিবীজোড়া খ্যাতি সাপ-বিশেষজ্ঞ হিসেবে। অনেক তকমা আঁটা বিজ্ঞানী তাদের জ্ঞানের কাছে নেহাত শিশু। সারা ভারতের একটিমাত্র সমবায় সমিতি দক্ষতার সঙ্গে বিষাক্ত সাপ ধরে তাদের বিষ বের করার কাজ করে চলেছে গত তিরিশ বছর ধরে। এই সমিতিটি চালায় ইরুলা গোষ্ঠীর সদস্যরা। সমিতিতে প্রবেশাধিকার শুধুমাত্র চারটি বিষাক্ত প্রজাতির সাপের- কালাচ, গোখরো, চন্দ্রবোড়া ও একটি ছোটো প্রজাতির বোড়া বা স-স্কেলড ভাইপার। এই চারটি প্রজাতির সাপের কামড়েই ভারতবর্ষে সবচাইতে বেশি মানুষ মারা যায় প্রতি বছর। তাই এদের সম্মিলিত বিষ থেকে তৈরি হয় এ দেশের একমাত্র সাপে কামড়ানোর প্রতিষেধক - ‘পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনিন সিরাম (ASVS)’. আক্ষরিক অর্থে 'বিষে বিষক্ষয়' আর কি! মাঠঘাট থেকে বিষাক্ত সাপ ধরে আনে ইরুলা সদস্যরা। সমিতিতে সেই কয়েক হাজার সাপ থাকে মাসখানেক। প্রতিটি সাপ থেকে সপ্তাহে একবার বিষ বের করা হয়। তারপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় জঙ্গলে (রিজার্ভ ফরেস্টে)। যে সাপ এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গেছে, তাকে চিহ্নিত করে দেওয়া হয় যাতে খুব শিগগির ধরা পড়লে তাকে একই ঝঞ্ঝাটে আবার পড়তে নাহয়। এই ইরুলা গোষ্ঠীর মানুষজনের কাছে সর্পবিদ্যায় সত্যিকারের হাতেখড়ি হল মেয়েটির। সাপ কোথায় লুকিয়ে থাকে, কোন সময় তাদের ঘোরাফেরা বাড়ে, এমনকি কোন সাপ কি প্রজাতির ইঁদুর খেতে ভালবাসে - এসবকিছুই জানল সে এক এক করে।
 |
Irula snake-catcher's Industrial Co-operative Society |
 |
| Venomous snakes kept in mudpots at ISCICS |
|
 |
My teachers and allies of snake-hunts in Tamil Nadu |
 |
with snake-charmers and a common cobra ( Gokhro) in a village at Birbhum |
দিন আনতে দিন খাওয়া মানুষগুলোর ঐশ্বর্য তাকে মুগ্ধ করে, আপ্লুত করে আর সাপ কে মন-প্রাণ দিয়ে বুঝতে শেখে মেয়েটি।
 |
In an Irula village in Tamil Nadu |
কয়েকশো বিষাক্ত সাপের সান্নিধ্যে থেকে সাপের সাথে দূরত্ব কমেছে তার এখন। ভেঙেছে অনেক অনেক ভুল ধারণা। সে লক্ষ্য করে দেখেছে যতই বিষাক্ত হোক না কেন, কোনও সাপই আক্রমণাত্মক নয়! মানুষকে তারা কামড়ানো তো দূরে থাক, পালাতে পারলে যেন বাঁচে ওরা। কানে বিশেষ শুনতে না পেলেও সাপ কিন্তু ভীষণ কম্পন-সচেতন। তাই মানুষের পায়ের চাপে মাটি একটু কাঁপলেই তাদের পালানোর তাড়াহুড়ো পড়ে যায়। তা সাপ দেখলে মানুষের মধ্যেও তো তাড়াহুড়ো পড়ে যায় একটা। উভয় পক্ষের এই ভয় থেকে আসে সংঘাত আর তাতে যেমন মানুষের প্রাণ যায়, সাপও মরে বিস্তর। এই সংঘাতের আরেকটি বড় কারণ হল মানুষের সাথে ইঁদুর আর ইঁদুরের সাথে সাপের অবিচ্ছেদ্য যোগ। মানুষের বসত, চাষবাস যেখানে বেশি, সেখানে ইঁদুরের অবাধ প্রতিপত্তি। আর ইঁদুর হল বিষাক্ত সাপেদের অন্যতম প্রিয় খাদ্য। যুক্তিসঙ্গতভাবে দেখতে গেলে এখান থেকে বোঝা যায় পরিবেশে সাপের প্রয়োজনীয়তা। ইঁদুর থেকে ছড়ায় বহু সংক্রামক রোগ, ছড়ায় প্লেগের মত মহামারী যা এক ধাক্কায় প্রাণ নিতে পারে কয়েক হাজার মানুষের। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার শস্যদানা নষ্ট করে ইঁদুর। দ্রুত প্রজনন ক্ষমতা ও গোষ্ঠীবদ্ধতা এই মারাত্মক ক্ষতিকর প্রাণী(পেস্ট)টিকে আরও অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে যেন। এ হেন ইঁদুরের সবচেয়ে বড় শত্রু হল সাপ। অতএব আমাদের সমাজ সাপের কাছে অনেকটাই ঋণী আর প্রকৃতির খাদ্যচক্রে সাপের অবস্থানটিও যথেষ্ট তাত্পর্য রাখে। মেয়েটি এখন জানে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এই নিরীহ প্রাণীটিকে বাঁচানো কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও যে অধিকারে পরিবেশে আর পাঁচটা সুন্দর প্রাণী বেঁচে থাকে, শুধুমাত্র সেই অধিকারটুকুও কি প্রাপ্য নয় সাপের ?
 |
Public awareness at ISCICS |
মেয়েটির রোজকার জীবনে সবচাইতে বড় সত্যি এখন সাপ। জেগে-ঘুমিয়ে সারাদিন স্বপ্ন দেখে সে - আরও জানতে হবে এই আশ্চর্য প্রাণীটিকে, শুধু পড়াশোনা নয় - জানতে হবে সবকটি ইন্দ্রিয় দিয়ে, জানতে হবে মানুষ আর সাপের দ্বন্দ্ব থেকে দুজনকেই বাঁচানো যায়। স্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় এখন। কিন্তু সে তো স্বপ্ন দেখতে চিরকালই বড্ড ভালবাসে। এতকাল শাওয়ারের পাইপের সাথে লেগে থাকা খোঁজের তাড়নাটুকুও কি স্বপ্নই ছিল না তার ?
 |
| Four Common venomous snakes of India-Common Cobra,Common Krait(with black n white bands),Russell's Viper (with eye-marks),saw-scaled viper(the smallest snake) |
|
 |
venom extraction from Prairie Rattlesnake while visiting University of Northern Colorado on Fulbright Doctoral scholarship |
১৯৯৬
khub bhalo laglo Dalia....tor jonyo gorbo hochchhe...
ReplyDeleteDhonnyobaad. Ami 2005 theke barichhara-bauondule. Wildlife ecology niye research korar chesta korchhi takhon theke. Saap niye kaaj korte chai shune sobai obak hoi.Jiggasa kore 'kano'?! Sahoj uttor 'bhalobasa'r kono karon hoi naa'.ektu golmele baa kothin uttor 'ki kore bujhlaam kato ta bhalobasi' !! Kothin uttor ta ami baro aykta boli naa kauoke. Kano jani naa ekhane ektu bolte ichhe holo :-).
Deletesotyi, jederke magazine ta refer korechi, tara jokhon bole je 'bah, ei meyeti eto kichu koreche' tokhon junior hisebe khub anondo hoy
ReplyDeleteDhonnyobaad Promita :). Anonder bois nei. Ei je tui ato bhalo kaaj korechhish je jonnyo amar lekha-chhobi-kaaj sobai dekhte pachhe e jonnyo amaar o vison anondo hochhe-bondhu hisebe.
DeleteNivedita school er meyera to erakom i bole dis promi :)
ReplyDelete;-)
Deletebah, sotyi besh bhalo lagche eta pore :)
ReplyDeletedhonnyobaad :-)
Deletetomar kaaj dekhe khoob bhalo laglo...:)
ReplyDeleteDekhechho bole amaro khub bhalo laaglo :-)
DeleteDhonnyobaad Ishani :-).
ReplyDeleteAmi bhabtei parchi na..erkom baundule jiban beche neoar sahas ke selam!!
ReplyDelete:-)
Deletesohoj sorol bhasay darun lekha..'baburam saapure' r saap dukhanar moto otota niriho na holeo besir vag khetre okaron ghrina ba bhiti udrek kari ei prani gulor somporke, tomader kaj somporke aro janar agroho roilo.. :)
ReplyDeleteDhonnyobaad Mrittika . Khoob anondo pelam amaader kaaj samporke tomar agroho dekhe. Ami o asha rakhi aro jananor mato bhalo kaaj korbo bhobissyot e. Saap sammondhhe koutuhol thaakle,jetuku jenechhi tai diye bojhano'r chesta korbo nischoi.Nirdidha e jigges koro jakhon khushi :-).
Deleteami emon ekta lekha dabi korechhilam dalia r thheke. o amader gorbo. comment korte deri holo. aj amar kottakeo tor lekha pore shonalam. r chobi dekhalam. tor moto aro kota meye bere uthhuk prithhibir buke......ei kamona kori. dekha hobar opekkhte acchi.
ReplyDeleteDhonnyobaad Dyuti di :-). Aami khushi je sesh porjonto lekha ta dite perechhi. Tomar sathe dyakha hole bhalo laagbe,aaro bhalo laagbe jodi tomaar Jhharkhand'er bari te dyakha hoi !! Emnitei tomar ranna-banna besh lobhonio laage,taar opor notun notun awe-sohure jayega amaye taane. Ami baddho pagol.Kondin dekhbe doom kore tomar barite giye uthechhi !
DeleteI am so proud of you...U R so so different from all of us...hats off to you!!! I will talk about you to my son this evening..he just loves snakes and aquatic animals...may be he would get inspired ..thank you so much
ReplyDeleteI really appreciate your intense reaction which adds more positive energy to me ! I indeed feel to do even better or just keep trying to do good ! Thank you so much Paramita di :-).
DeleteBah wonderful! lekha ta khub interesting, lekhika r kotha aro beshi interesting laglo!
ReplyDelete