ফিরিয়ে দাও আমার হারিয়ে যাওয়া স্কুলজীবন


কলেজ থেকে ফিরে এসে সেদিন চোখ বোলাচ্ছিলাম ফেসবুকের নিউজ ফিডটায়। হঠাৎই চোখ আটকে গেল, "আমাদের ইস্কুল-নিবেদিতা স্কুল" গ্রুপের একটা পোস্টেস্কুলের সব ছাত্রীরা একসঙ্গে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের উৎসবে মেতে উঠেছে। অনেক ছাত্রী রঙিন ফিতে আর সাদা ধবধবে স্কুলড্রেসে সেজে ড্রিল করছে, মনে হচ্ছে ঠাকুরদালানে রংবেরং-এর আল্পনা। অনেকে গান গাইছে, অনেকে আবার নিজেদের হাতে বানানো চার্ট দেখছে। ইস্, কি সৌভাগ্যবতী না ওরা? এখনও ওরা স্কুলে পাঠরতা ছাত্রী। এখনও ওদের দিন শুরু হয় বেদমন্ত্র গেয়ে। এখনও ওরা স্কুলের ঠান্ডা মেঝেতে সার বেঁধে বসে ক্লাস করে। বড্ড হিংসা হয় আমার ওদের ওপর। মনে হয় যাই ছুটে এই দমবন্ধ করা জীবন ফেলে, যাই মিশে ওদের ভিড়ে। মনে পড়ে গেল সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো, স্মৃতির অ্যালবামে সাজিয়ে রাখা আমার সেরা স্মৃতি, আমার স্কুলজীবন।

     এখনও মনে পড়ে ক্লাস ওয়ানের সেই অ্যাডমিশন টেস্টের দিনটা। মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট পায়ে গিয়েছিলাম পরীক্ষা দিতে। কী বিশাল স্কুলবাড়ি, বড় বড় থাম ,কোনও অলিখিত নিয়মে চারপাশের সকলে চুপ করে শান্ত হয়ে রয়েছে, একটুও কোলাহল নেই কোত্থাও।  সত্যি বলছি বেশ ভয় ভয় মনেই লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম সেদিন।


        তারপর মৌখিক পরীক্ষার দিন ছোটবাড়ির গৌরীদি আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন আগের স্কুল ছেড়ে এখানে ভর্তি হতে এলাম। শিখিয়ে দেওয়া কোনও সাজানো উত্তর আসেনি আমার মাথায় তখন। বলেছিলাম, "আগের স্কুলে তো বড্ড পড়াশোনা করতে হতো।  ভালো লাগে না আমার পড়তে অত। তাই ছেড়ে দিয়েছি।" এমন নির্ভেজাল উত্তর শুনে ঘরের সব্বাই খুব হেসেছিলেন সেদিন।

     অবশেষে কে সি দাস থেকে কেনা সাদা স্কুলড্রেস, লাল বেল্ট আর বজ্রচিহ্নাঙ্কিত ব্যাজ পরে পা দিয়েছিলাম স্বপ্নের স্কুলের আঙিনায়। সত্যি বলছি প্রথম প্রথম বেশ ভয় করত নতুন স্কুল, নতুন দিদিমণি, নতুন বন্ধুদের দেখে। ক্রমে ভয় কেটে যে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন গড়ে উঠল সকলের সঙ্গে, তা আজও অটুট। তখনও নতুন বাড়ি তৈরী হয়নি। ছোটবাড়ি বলতে আমরা বুঝতাম সুধীরাভবনকেই, যেখানে ওয়ান থেকে ফোরের ক্লাসগুলি হতো।  স্কুলে গিয়ে জুতো খুলে নিজের নাম লেখা জুতোর ব্যাগে ভরে রাখতাম নির্দিষ্ট জায়গায়। দশটায় স্কুল শুরু হওয়ার পর ঠিক সাড়ে দশটায় প্রার্থনার ঘন্টা পড়ত। মাঝের সময়টায় চলত প্রার্থনার লাইন করানো, কারওর হাতে বড় নখ বা নেলপালিশ আছে কি না তা দেখা, মায়ের ছবিকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। নির্দিষ্ট ছাত্রীরা সেইসব কাজে বহাল থাকত। কোনওরকম ত্রুটি দেখা গেলেই ছিল শাস্তির লাইন যাতে আর না ভুল হয়। মিথ্যে বলব না এসব বাঁধাধরা নিয়ম ওই বয়সে একটুও ভালো লাগত না। মনে হত কবে মুক্তি পাব।


     তারপর সাড়ে দশটার ঘন্টা বাজলে স্কুল প্রাঙ্গন এমনকি গোটা নিবেদিতা লেন ভেসে উঠত বেদমন্ত্রের সম্মিলিত উচ্চারণে আর ঠাকুর, মা, স্বামীজি, ভগিনীকে নিয়ে রচিত গানে। মনে হতো কোনও আশ্রমে একটি নতুন দিনের সূচনা হল। এরপর শুরু হতো ক্লাস। ছোটবাড়ির শিক্ষিকাদের কাছে শিক্ষার ভিত তেরী হওয়া যে কী ভীষণ সৌভাগ্যের ব্যাপার তা পরবর্তী জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে উপলব্ধি করেছি।


      এরপর ক্লাস ফাইভে উত্তীর্ণ হয়ে এলাম বড়বাড়িতে। মেন বিল্ডিং এর ক্লাসগুলো করতাম মেঝেতে শতরঞ্চি পেতে বসে, যেমনটা আশ্রমে হয়। এখানে আরও কড়াকড়িআরও নিয়মের বেড়াজাল। মনে পড়ে অনেক বকা খেয়েছি বেশি কথা বলতাম বলে, অনেক গার্জেন কলও হয়েছে। তখন ভাবতাম কবে বড় হব; কবে বকা খাওয়া, গার্জেন কলের সমাপ্তি ঘটবে জীবন থেকে!


     প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে আবৃত্তি, রচনা লেখা, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। ওই সময়ই গিরীশ মঞ্চে অনুষ্ঠিত হত ছাত্রীদের নাটক, নানান অনুষ্ঠান।


    স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে চলত জোরদার গান, নাচের মহড়া। স্কুলের পাশ দিয়ে আগস্ট মাসের প্রথমদিকের কোনও এক দুপুরবেলা হাঁটলেই শোনা যেত,"কারার এই লৌহকপাট/ভেঙে ফেল কর রে লোপাট" কিংবা "চল চল চল/ উর্দ্ধগগনে বাজে মাদল"। একদল বাঁশি বাজানো শিখত তো আরেকদল ড্রাম বাজানো অনুশীলন করত। ক্লাস টিচাররা ব্যস্ত থাকতেন ছাত্রীদের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর চার্ট বানানোর কাজে। সে এক সাজো সাজো রব চারিদিকে। 


    ক্লাস সেভেনে ক্যাম্পে যাওয়ার দারুণ অভিজ্ঞতা সারাজীবনেও ভোলবার নয়। বীথিদির শেখানো "পুরুলিয়ার ঐ মাঠাবুরু/ ডাক দিয়েছে তাই যাত্রা শুরু" গান ট্রেনে গাইতে গাইতে পৌছেছিলাম পুরুলিয়া স্টেশনে। ছোট ছোট পাহাড়ের নীচে অনেকগুলি তাঁবু খাটিয়ে ছিলাম সব্বাই ঐ সাত-আটদিন। রাতে চাঁদের আলো এসে পড়ত মাঠাবুরু পাহাড়ের গায়ে, ঘন জঙ্গলের গাছগুলোর মাথায় আর আমাদের তাঁবুর ওপর। কী যে অসম্ভব সুন্দর লাগত তখন, তা এই ইটকাঠ পাথরের স্তূপের শহর কলকাতায় বসে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সকাল হলেই শুরু হতো রক ক্লাইম্বিং, ট্রেকিং, নেচার স্টাডির প্রশিক্ষণ। সারাদিন ধরে তাই চলত। ক্যাম্পের শেষ দিন আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসে যখন সব্বাই গান ধরেছিলাম
আ হান্ড্রেড় মাইলস, আ হান্ড্রেড মাইলস
ইউ ক্যান হিয়ার দ্য হুইসলস ব্লো আ হান্ড্রেড মাইলস
তখন চোখ জলে ভিজে এসেছিল সব্বার। মনে হয়েছিল কী দরকার এই শহুরে যান্ত্রিক সভ্যতার। প্রকৃতির কোলে এই অরণ্যজীবনটাই তো অনেক সুন্দর। আবার সব ছেড়ে দৈনন্দিন জীবনে ফিরে যেতে হবে বলে কেঁদেছিলাম প্রায় অনেকেই।

 

    ক্লাস নাইনে গিয়েছিলাম শ্রীরামপুর রাজবাড়িতে ভ্যালু ওরিয়েন্টেশন ক্যাম্প-এ। শিখেছিলাম প্রত্যাহার যোগ, মূল্যবোধশিক্ষা, ধ্যান ইত্যাদি। রাজবাড়িকে নিয়ে অনেক ভূতের গল্প সকলের মধ্যে প্রচলিত ছিল বহুদিন ধরেই। আমার এক বন্ধু একদিন একটু রাতের দিকে শাড়ি পড়ে চুল খুলে জানালার ধারে দাঁড়িয়েছিল। অন্ধকারে সে দৃশ্য দেখে অশরীরী আত্মা, ডাকিনী, পেত্নী না জানি আর কী কী ভেবে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়েছিল আমার বাকি বান্ধবীগণ। সে এক ভয়ানক পরিস্থিতি। কিন্তু আমার কোনওদিনই ভয় লাগেনি সেরকম। বরং অনেক রাত্রে যখন রাজবাড়ির সবচেয়ে বড় হলঘরটায় সব্বাই ঘুমিয়ে পড়ত, আমি তাকিয়ে থাকতাম জানালার উপর কারুকার্য করা রঙিন কাচগুলোর দিকে, জানালা দিয়ে দেখতাম মধ্যরাতের গঙ্গানদীর রূপ। ভাবতাম আজ থেকে তিনশো বছর আগে কোনো প্রতাপশালী রাজা হয়তো এখানেই থাকত, এই ঘরেই ঘুমাত। ভেবে শিহরণ জাগত সারা শরীরে। ফিরেছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো অনেক সুন্দর স্মৃতি আর রঙিন মুহূর্তকে মনে নিয়ে।


     স্কুলের কথা বললেই মনে পড়ে যায় বিভিন্ন বিল্ডিং-এ ক্লাস করার কথা। কখনও ক্রিশ্চিন ভবন তো কখনও সায়েন্স বিল্ডিং, কখনও আবার ফোর সি বিল্ডিং। সায়েন্স বিল্ডিং-এর গ্যালারি রুমে ক্লাস করা ছাত্রীদের কাছে একদিকে যেমন বেশ পছন্দের ছিল, অপর দিকে ভয়েরও ব্যাপার ছিল। কারণ কেউ একটু কথা বললেই তা খুব সহজেই দিদিদের চোখে ধরা পড়ত। বাগানের মাঝে ক্রিশ্চিন ভবনও বেশ মনোরম ছিল।

    স্কুল বললেই আজও যাদের নামগুলো ভেসে ওঠে মনডায়রির পাতায়, তাঁরা হলেন স্কুলের সম্মানীয়া শিক্ষিকা আর মাতাজিগণ। কখনও তাঁরা বকেছেন, কখনও ভালোবেসেছেন। কখনও শাসন করেছেন তো কখনও আবার প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। একটা কথা না বলে পারছি না যে আমাদের স্কুলে মনোযোগ দিয়ে পড়লে সত্যি কোনও গৃহশিক্ষক ছাড়াই মাধ্যমিকে ভালো ফল করা যায়। স্কুলের শিক্ষাব্যবস্হা যে কতটা ভালো তা স্কুল পাশ করে যাওয়ার পর উপলব্ধি করে সবাই। কোনওরকম অহঙ্কার করে একথা বলছি যে তা নয়, এটাই সত্যি। আমাদের স্কুলের শিক্ষিকা আর মাতাজিদের থেকে শিক্ষা আর তাঁদের সান্নিধ্য যারা লাভ করেছে তাদের সৌভাগ্যবতী না বলে পারা যায় না। শুধু পড়াশোনা নয়; ন্যায় অন্যায়, মূল্যবোধ জীবনবোধও শিখেছি তাঁদের কাছেই। বাংলা ভাষায় স্পষ্ট উচ্চারণ, সঠিক বানান এসব শেখাও তাঁদের হাত ধরেই।

       ধীরে ধীরে ফেয়ারওয়েলের দিন উপস্থিত হল। যখন আমাদের ব্যাচের স্মৃতিচারণা হচ্ছিল, কেঁদেছিলাম খুবই আজও মনে পড়ে। ছেড়ে যেতে হবে এতদিনের স্কুলকে, এতদিনের অভ্যাসকে, মানতে কষ্ট হচ্ছিল খুব। কিন্তু পুরাতনকে একদিন জায়গা ছেড়েই দিতে হয় নতুনদের জন্যজগতের এই চিরন্তন নিয়মকে স্বীকার না করে উপায় নেই। তাই ২০১১ সালের মাধ্যমিক ব্যাচকেও বিদায় নিতে হল। এরপর এসেছিলাম সেই মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। স্কুলে তখন আনন্দে মেতে উঠেছে সব শিক্ষিকা আর ছাত্রছাত্রীরা। আমাদের স্কুল থেকেই মাধ্যমিকের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে আমাদের বান্ধবী নিবেদিতা মান্না। স্কুলের গড় ফলাফলও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। মনে আছে সব্বাইকে একটা করে চকোলেট দেওয়া হয়েছিল ঐদিন স্কুল থেকে। সেদিনের কথা ভাবলে আজও মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।

     আজ ছবছর কেটে গেছে স্কুল পাশ করার পর। কিন্তু সত্যি বলছি যে সম্পর্ক ছিল স্কুলের সঙ্গে,বন্ধুদের সঙ্গে,তা এখনও একই রকম রয়ে গেছে। স্কুল আমায় দিয়েছে প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা, অনেক ভালবাসায় ভরা জীবনের সেরা মুহূর্তগুলো আর আমার প্রিয় বন্ধুকে। আজও যখন বাড়ির সামনে দিয়ে স্কুলবাসটা রোজ যায়, উঠে পড়তে ইচ্ছে করে খুব। যেতে ইচ্ছে করে সেই গলিটায় যেখান দিয়ে গিয়ে পৌছতাম স্বপ্নের স্কুলবাড়িতে। আজও মনে হয় লাল ফিতে সাদা লালপাড় শাড়ি পড়ে ঠাকুরদালানে দাঁড়িয়ে স্বর মেলাই বেদ বেদান্তের শ্লোকে। তখন যে বকুনির হাত থেকে পালাতে চাইতাম, আজ এতদিন পর মনে হয় কেউ তো শাসন করে না ওভাবে। কেউ কি তাহলে ওঁদের মতন করে ভালোবাসেন না? কেউ কি চায় না আমার ভালো আর ওরকম করে? স্কুলের পাশ দিয়ে গেলে যখন স্বাধীনতা দিবসের রিহার্সালের গান শুনতে পাই, প্রাণটা কেঁদে ওঠে।  আবার ফিরতে চাই স্কুলের আঙিনায় গ্রীষ্মকালের দুপরে মেন বিল্ডিং-এর ঠান্ডা মেঝেতে বসে ক্লাস করতে চাই আবার, যেখানে প্রথম শিখেছিলাম এ প্লাস বি হোলস্কোয়ারের সূত্র কিংবা সন্ধি কারক সমাসের নিয়ম। আবার শুরু হোক না সব প্রথম থেকে। স্কুলের প্রতিটা কোণে তো আজও আমার নিঃশ্বাস আছে, স্কুলের প্রতিটা দেওয়ালে আজও রয়ে গেছে আমার স্পর্শ আর রয়ে গেছে একরাশ হারিয়ে যাওয়া টুকরো টুকরো স্মৃতি।

        ভালো লাগে না এই বড় হয়ে যাওয়া, ভালো লাগে না এই দমবন্ধ করা পরিণত জীবনের দিনগুলো। এত জটিল, সমস্যাজর্জরিত জীবনের মাঝে যখন মনে পড়ে ঐ সব সারল্যে ভরা শৈশব দিনগুলোর কথা, তখন মনের জানলায় এক চিলতে রোদ্দুর এসে পড়ে, একরাশ তাজা বিশুদ্ধ বাতাসের ছোঁয়া লাগে। অথচ মনটা ভারী হয়ে যায়, চোখের কোণে আসে জল। ছ’বছর আগে ফেলে আসা মুহূর্তগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকে বারবার। মনে মনে ভাবি, সেসব কি সত্যি ফিরবে না আর কোনওদিন?


কৌশানি চট্টোপাধ্যায় [২০১১]




5 comments:

  1. ভালো হয়েছে লেখাটা।magazine টা খুব ভালো হয়েছে

    ReplyDelete
  2. ঃ)কৌশানি তোর এই লেখাটা প্রথমবার পড়েই মনে হয়েছিল, সামনে থাকলে তোকে একবার জড়িয়ে ধরতাম। খুব মনকেমন করা লেখা।

    ReplyDelete
  3. আমার মনের কথাই যেন কৌশানি এখানে লিখেছে। সব কেমন ভেসে উঠল চোখের সামনে।।

    ReplyDelete
  4. কৌশানি tomar lekha ta pore harie gechilam school er sei sarollo makha sonali din guli te. Amader school j amader kache kotota gorber aj proti muhurte ta anubhab kori. Jiboner sobcheye sera upohar ei school.

    ReplyDelete