প্রাণের শহর কলকাতা, গানের শহর কলকাতা

এ হেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্প্রতি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ওপর বহুল বাড়তি দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। বিশ্বকবি অর্থাৎ গ্লোবাল ভূমিকার পাশাপাশি তাঁকে অনেক লোকাল ভূমিকাও পালন করতে হচ্ছে। কবিত্বের সঙ্গে সঙ্গে অনেক অকবিত্বপূর্ণ দায়িত্বও তাঁকে নিতে হচ্ছে। তিনি যে আধুনিক সমাজেও প্রাসঙ্গিক তা অক্ষিতে অঙ্গুলি নির্দেশে দেখাবার জন্য তাঁকে বহুরূপে ব্যবহার করে বহুরূপে সম্মুখে তোমার নীতিতে আধুনিক সামাজিকতার অপরিহার্য অঙ্গ করে তোলা হচ্ছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তো অপরিবর্তিত পরিস্থিতিতেই তাঁর ওপরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউর যানচলাচলে নজরদারির দায়িত্ব দিয়েই ছিলেন। তত্কা‌লীন নবনির্মিত টেরাকোটা তোরণের শীর্ষে তিনি হাফবাস্টে দাঁড়িয়ে বাঁদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-শীত তুচ্ছ করে শাশ্বত ভ্রূকুঞ্চনে এমনই নিশ্ছিদ্র নজরদারি করে যাচ্ছেন যে কাকেরাও তাঁকে সমীহ করে ওড়ে। বাতাসে খবর যে গত এক বছরে প্রাত্যহিক দিনের প্রথম বাস আর রাতের শেষ বাসের সময় নির্ভুল রিপোর্ট করার স্বীকৃতি স্বরূপ সম্প্রতি সাব্যস্ত হয়েছে যে শহরের সব ট্রাফিক সিগন্যালে তাঁর গান দিয়েই যানচলাচল নিয়ন্ত্রিত হবে। হচ্ছেও তাই। আকাশে-বাতাসে-ধূলিতে-বালিতে-দিনে-রাতে-সকালে–বিকেলে-গ্রীষ্মে-বর্ষায়-শীতে-বসন্তে-দু:খে-সুখে-হাসিতে-কান্নায়-পেটখারাপে-চোখখারাপে-মাথাখারাপে-মনখারাপে এক ওষুধ – গাঁকগাঁকে হাঁকডাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত। রাস্তায় ঘোড়ার পিঠে বর, সামনে ব্যান্ডপার্টির সুরে শীলা কী জওয়ানি; মাথার ওপরে ভাসছে একটুকু ছোঁয়া লাগে। ঘোড়া নাজেহাল, কোন তালে সে চলে! নিচে রাম নাম সত্য হ্যায়, ওপরে মোরা সত্যের পরে মন আজি করিব সমর্পণ। বেচারি মড়া দিশেহারা।
ভাবনাটা ছিল খানিকটা অ্যারোমা থেরাপির অনুকরণে মিউজিক থেরাপির বন্দোবস্তের মতো আর কী! গান থেরাপি দিয়ে মানুষের প্রাণের আরাম বৃদ্ধি ও হৃদয়ের স্পন্দন জোরদার করা। এক কথায় জিন্দেগিকে জাঁকিয়ে তোলা। অপর একটি উদ্দেশ্য হল এইসব সূক্ষ্ম ও দামী থেরাপিকে মা-মাটি-মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলে সমাজকে শ্রেণিভেদ মুক্ত করা। মা এবং মাটির সাহিত্যে ও বাস্তবে সর্বংসহা খেতাব আছে। কিন্তু সব মানুষই তো আর মা বা মাটির মতো নয়। ফলে কিছু মানুষ, বিশেষত যাঁদের এই সব ট্রাফিক সিগন্যালের নাকের ডগায় বাস, তাঁরা আজকাল খিটকেলি রাগে গাইতে শুরু করেছেন gun-এ gun-এ হৃদিস্পন্দন যায় টুটে.....
অর্থাৎ গানের সঙ্গে প্রাণ এ শহরে আর হাত ধরে চলতে নারাজ। প্রাণ বলে গানকে – ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। আর গান বলে – রাখ তোর নাচানাচি!

মীনা দাঁ
১৯৭৫

2 comments:

  1. mina di, next issue teo kintu erokom arekkhana chai.. Mina di ekdom prothom jara contribute korechilo, tader modhey ekjon.. Ar khub utsaho o kichu important tips dieche..

    ReplyDelete